Wednesday, 22 February 2017

একটি দীর্ঘ কবিতা - মৃত সন্তের ছায়া

 Saint Francis of Assisi in Ecstasy


মৃত সন্তের ছায়া

He knew everything before his birth

তখনো জন্মায়নি সেন্ট জোভা
অথচ মনে মনে জন্মের বহু আগেই সে
এেঁকে ফেলেছিল—সেই শহর, সেই জগৎ
যেখানে কতিপয় পানশালা আর হাতে গোনা হাসপাতাল
দুটো ব্রোথেল আর একটা মৃত লাইব্রেরী
লাইব্রেরীর ধারে ছোট্ট একটা নরক
আর এই নরকের রিডিংরুমে বসেই
সে লিখতে চায়—জন্মসংক্রান্ত এপিটাফ
সে লিখতে চায় মৃত্যুর গ্রাফিতি— হাসপাতালে, ব্রোথেলে
পানশালার দেয়ালে দেয়ালে
অবশ্য ব্রোথেলে শীৎকার ছাড়া
কোনো ভাষাই ঠিকমতো প্রযোজ্য নয়...
তবে হ্যাঁ, লাইব্রেরীতে রাখা আছে এক গভীর স্তব্ধতা
যাতে ডুব দিয়ে সে সেলাই করবে পৃথিবীর পাঁজর
টুঁটি চিপে বন্ধ করবে চাপ চাপ নীল রক্ত
সেন্ট জোভা এখনো জন্মায়নি
কেননা জন্মের বহু আগেই তাকে কেউ হত্যা করে গেছে




An angel sets free his eyesAnd a giant fits his teeth

প্রথমে চোখ ফোটে সেন্ট জোভার
আর তারপর তার মাড়ি ঘেঁষে বেরোয়
ক্ষুদে ক্ষুদে দাঁত
এক রক্তপায়ী ঈশ্বর সাঁড়াশি পাকিয়ে
চেপ্টে দেয় তার কপাল,
এক থলথলে শয়তান
হাতুড়ি পিটিয়ে খাড়া করে তার মেরুদন্ড
উঠে দাঁড়ায় সেন্ট জোভা
তার চামড়ায় লেগে আছে
চিটচিটে-পোড়া-কালো মৃত্যুর দাগ
সে হাঁটা শুরু করে চারচৌকো শূন্যতায়...




We should dig our tombsBefore our birth

জোভা বড় গ্রেভ ভালবাসে
ভালোবাসে ক্রুশ আর ছ্যাঁদা কপাল
আর তাই জন্মানোর বহু আগেই
সে মাথায় বড় দেখে একটা ফুটো আঁকায়
এবং তারপর সেখান থেকে টাঙিয়ে দেয় লম্বা কালো ক্রুশ
হাওয়া দিলে ক্রুশ দুলে ওঠে
হাওয়া দিলে কেঁপে ওঠে সেন্ট জোভা
সে হাঁটতে থাকে পোড়ো-সেমেট্রির দিকে
কারণ সে মনে করে—এ জগৎ খুব বড় নয়
যে কোনো স্হানেই তাকে আবার হত্যা করা হতে পারে
আর তাই সে দ্বিতীয়বার পালাতে চায় মৃত্যুর থেকে
আসলে, জেনে গেছে জোভা:
গ্রেভই পৃথিবীর একমাত্র জায়গা
যেখানে মৃত্যুর প্রবেশ নিষেধ....




The shadows are our only existence

রাতের অন্ধকারে ভ্রমন করে সেন্ট জোভা
ভ্রমন করে দিনের আলোয়
তার পায়ের নীচে আকাশ
তার মাথার উপর তারা
সে শুয়ে থাকে পরিতক্ত্য লাল জলধারায়
সে শুয়ে থাকে লুন্ঠিত শবাধারে
সে হাঁটে ও খেলে বেড়ায়
আগাছায়, ঝোপে-জঙ্গলে
ইচ্ছে হলে দু'একটা বকফুল হাতে নিয়ে ঘোরে
আর ঠিক এ সময়ে তার সঙ্গী হয় ছায়া
যে ছায়াকে সে প্রকৃত জীবন মনে করে
অথচ, দৃশ্যত ভারী দেহ
কিছুতেই তার পিছু ছাড়ে না
আর তাই, অবশেষে
নিজের ভারী মাংসপিন্ড কাঁধে তুলে
ছায়া ফের হাঁটা শুরু  করে...




Dream is the actual world where we live

'থামো'—অন্ধকার ভেঙে ছুটে আসা
গমগমে কাঁপা কন্ঠস্বরে নড়ে ওঠে সেন্ট জোভা
'এই ভারী ঠান্ডা শরীর নিয়ে
তুমি আর যেতে পারবে না কোথাও'
জোভা বলে—'আমি প্রস্তুত'
'তবে এক্ষেত্রে দিনদিন
তোমার ছায়া আরো বেশী দীর্ঘতর হবে'
জাদুকন্ঠ থামতেই  চারদিকে শুরু হয় প্রলয়
জোভা দেখতে পায়, জঙ্গলের
অস্পষ্ট আলোয়
তিনটে আহত হাত এগিয়ে আসছে তার দিকে,
আর ক্রমে একটু একটু করে সে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রুপফটো থেকে...
ধড়মড় করে উঠে বসে জোভা
চোখেমুখে জলের ছিটে দেয়
ঘুমে ঘুমে ঘন্টা বেজে ওঠে—ঢং ঢং ঢং




There is an another world beneath our hearts

যে সব সকালে গাছে ডিম পাড়ে রোদ
যে সব সকালে মেঘ করে কিছু দূরে
সে সব সকালে হাঁটা আরো বেশী দীর্ঘতর হয়
জমতে থাকে নুন—পাথুরে গন্ধে ছত্রাকের নেশায়
আর এমন দিনেই কান্না পায় সেন্ট জোভার
সে দেখতে পায়—ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসা
ফাটা চামড়ার মেয়েরা কেবলই খাবারের সাথে হারিয়ে যায়
আর তাদের বাদামী শূন্যতা
চিকচিক করে কালচে ফ্রকে...
জোভার হঠাৎ মনে হয়—
কোনো পার্থিবই তাকে আর বয়ে নিয়ে যাচ্ছে না
শুধু এক সম্মোহন আর বিপন্ন ধ্বংসস্তূপ গড়ে উঠছে তার বুকে
হ্যাঁ, জন্মের আগে যে আবহাওয়া গ্রহনযোগ্য ছিল
প্রযোজন ছিল যে বিশ্বাস আর নির্জনতাগুলো
সে তার সবকটাই অর্জন করেছে
অথচ জীবন বলতে তার অতিজীবনকেই মনে পড়ে
মনে হয় লাংসের মাঝবরাবর সেই বিশ্বস্ত ফুটোর কথা
যার কালো নিখুঁত দরজা দিয়ে
হেঁটে আসে ফাটা-চামড়ার মেয়েরা...




He makes them godsHe makes them devils


সেন্ট জোভাকে কেউ চোখে দেখেনি
কেউ শোনেনি তার গলার আওয়াজ
অথচ দ্যাখো, মানুষের ভিড়েই জোভা কেমন
হেঁটে-খেলে বেড়ায়
সে ঘুরে বেড়ায় বনে-বাদাড়ে
নিষ্পাপ পশুপাখির সঙ্গে কবরে-গির্জায়
কিন্তু, কে এই জোভা?
একথা আজও জানা যায়নি ভালো করে
তবে শুধু জানা গেছে এই যে—
প্রতিটা জীবেই থাকে এক একজন সেন্ট জোভা
যারা কাউকে বানায় আস্তিক শয়তান
আর কাউকে কোরে তোলে নাস্তিক ঈশ্বর...